Tajul Islam Sir

Taijul Sir

তাজুল ইসলাম স্যার

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা তাজুল

তৃনমূলে ক্রীড়াব্যক্তিত্ব

50 বিঘার বিশাল মাঠ। স্বধীনতার আগে থেকে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলে এখানে। কিশোরদের সঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রাঙ্গাটুঙ্গির এই মাঠে খেলছে এখন কিশোরিরাও। আকাশী-নীল জার্সিতে তাদের অনুশীলন ও অনেকে আগ্রহ নিয়ে দেখেন অনেকে। অথচ শুরুতে উড়ে আসত শুধুই টিটকিরি। সুযোগ সুবিধায় পিছিয়ে থাকা গ্রমের মেয়েদের হাফপ্যান্ট পরে খেলতেও এসেছে আপত্তি। তবে দিনে তিনবেলা খেতে না পারা মেয়েরা ফুটবল ঘিরে দেখেছিল বাঁচার স্বপ্ন। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে তাদের জীবনে আসেন অধ্যক্ষ তাজুল ইসলপাম। তার বলিষ্ট নেতৃত্বে এই গ্রামের মেয়েদের সুনাম এখন দেশজুড়ে। জাতীয় অনূর্ধ্ব-14, 15 আর 16 সুযোগ পেয়েছে অনেকে। সুযোগ পেয়েছে সাতজন কিশোরী ফুটবলার। বসুন্ধরা কিংসের নতুন গঠিত মেয়েদের দলে রয়েচে চারজন।

প্রত্যন্ত গ্রাম রাঙ্গাটুঙ্গির মেযেদের এতদূর পৌঁছে দেয়ার কারিগর রানীকৈল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম। ভারতের হরিয়ানার বালালী গ্রামের মহাবীর সিং ফোগাটের কথা তার জানা। ফোগাট সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজেদের মেয়েদের মুষ্টিযোদ্ধা বনিয়েছেন (ফোগাটের ঘটনা নিয়ে 2016 সালে বলিউডে দঙ্গল নামে হয়েছে)। তাজুল ইসলামও সোহাগী, সাগরিকা, আদুরীদের নিয়ে 2014 সালে গড়ে তোলেন রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমী। শুরুতে অভিভাবকরা রাজি হননি নিজেদের মেয়েদের ফুটবল খেলাতে। কারন মেযেরা হাফ প্যান্ট পরলে জাত যাবে যে তাদের! পরে বিয়ে দেয়াও হবে কঠিন। তবে তাজুল স্যারের অনুরোধে কয়েকজন আভিভাবক রাজি হয়ে যান মেয়েদের মাঠে পাঠাতে।

রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামে তাজুল ইসলামের পরিবারের 50 বিঘার বিশাল মাঠে শুরু হয় অনুশীলন। শুরুতে কোচ ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত রেফারী সেতাউর রহমান।পরে যোগ দেন বাফুফের অরেক রেফারী গোপাল মুর্মু সুগা ও জয়নুল আবেদিন। 2016 সালে এসে দলটা দাঁড়ায়। রাঙ্গাটুঙ্গীর মেয়েরা উপজেলা পার করে জেলা চাম্পিয়ন হয়। 2016 সালের জেএফএ অনূর্ধ্ব-14 টুর্নামেন্ট ঠাকুরগঁও জেলা দল গড়া হয় রাঙ্গাটুঙ্গীর মেয়েদের নিয়েই। সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছিল মেয়েরা। শেষে ঢাকার কমলাপুর ষ্টেডিয়ামে ভাল খেলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে রংপুরের কাছে হেরদে যায়।

2017 সালটা ছিল সাফল্যে ভরা।জেএফএ কাপের শুরুটা আরো দুর্দন্ত হয়েছিল ঠাকুরগাঁও জেলা দলের।ফাইনালে গাইবান্ধা জেলা দলকে 4-1 গোলে হারিয়ে ঢাকায় আসার টিকিট নিশ্চিত করে ফেলে তারা। মূল পর্বে ঢাকায় এসেও গ্রুপে টানা 3 ম্যাচ জিতে অপরাজিত চাম্পিয়ন হয়ে পৌছে যায় সেমিফাইনালে। এরপর সেমিফাইনালের বাধা পেরিয়ে টিাকট পায় ফাইনালের। তবে শিরোপা লড়াইয়ে পেরে ওঠেনি কলসিন্দুরের মেয়েদের নিয়ে গড়া ময়মনসিংহ জেলা দলের সঙ্গে।

টুর্নামেন্টে রানর্সআপ হওয়ায় 2017 সালে ‘জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে তাজুল ইসলামের গড়া রাঙ্গাটুঙ্গী একাডেমী। তবে ব্যক্তিগত পুরস্কার নয়, তাজুল ইসলামে লক্ষ্য ফুটবলের মাধ্যমে মেয়েদের নিজ পায়ে দাঁড় করানো, আমার একাডেমী থেকে বয়সভিত্তিক জাতীয় দলগুলোতে খেলছে অনেকে। অভাব অনটনে বেড়ে উঠা মেয়েরাই এখন পরিবারের খরচ চালাচ্ছে। ওদের দেখে অনেকে আসছে আমার একাডেমিতে। চেষ্টা করব সবাই যেন নিজেদের পায়ে দাড়াতে পারে আর অবদান রাখতে পারে দেশের ফুটবলে।’